হাঁপানি কী ও কেন এই রোগ হয়?

আপনার শিশুর হাঁপানি আছে কিনা তা বুঝবেন কী করে?

হাঁপানি বা অ্যাজমা ফুসফুসের একটি ক্রনিক রোগ যাতে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ব্যবহৃত ফুসফুসের সবচেয়ে ছোট চ্যানেলের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন হয় এবং তা ফুলে ওঠে। হাঁপানির আক্রমণে বায়ু চলাচলের এই পথ বা ব্রঙ্কাই সরু হয়ে যায়। ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এই সময় কাশি-সহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। অ্যাজমা পুরোপুরি সারে না, যদিও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর এর জন্য খুঁজে দেখতে হবে ঠিক কী কারণে এর আক্রমণ হচ্ছে। দেখা গেছে ১০ জন শিশু পিছু ২-৩ জনের হাঁপানী থাকে। শিশুদের ক্ষে্রে মেয়েদের তুলনায় ছে এই োগ বেশি হলেও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা পুরুষদের তুলনায় হাঁপানিতে বেশি ভোগেন। দেশ ও অঞ্চলভেদে রোগের প্রকোপে ভিন্নতা দেখা যায়। অনেকে মনে করেন হাঁপানীর সঙ্গে আবেগজনিত সমস্যার যোগ রয়েছে। তবে তা সত্যি নয়।

হাঁপানি

কেন হয়?

অ্যাজমা ও অ্যালার্জি তাঁদেরই বেশি হয় যাঁদের পরিবারে অ্যাজমা ও অ্যালার্জির ইতিহাস আছে। যদিও বিষয়টি এখনও পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় নি। তবে এই রোগের সঙ্গে পরিবেশের স্পষ্ট যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া গেছে। যে যে কারণে হাঁপানির বাড়াবাড়ি হয় তা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। সাধারণ ভাবে নিম্নলিখিত কারণে হাঁপানী বেড়ে যেতে পারে-

  • অ্যালার্জি, যেমন, ঘরের ধুলো, আরশোলা, বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর এবং ঘাস, আগাছা কিংবা ফুলের রেনু
  • সংক্রমণ, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্যান্য শ্বাসে বিঘ্ন সৃষ্টিকারি ভাইরাস
  • উত্তেজক, যেমন, পারফিউম বা ক্লিনিং সলিউশনের তীব্র গন্ধ, বায়ু দূষণ, তামাক, ধূপকাঠি, মোমবাতি অথবা আগুনের ধোঁয়া
  • ঠাণ্ডা ও শুষ্ আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা ও আদ্রতার পরিবর্তন
  • তীব্র আবেগ, যেমন, উদ্বেগ, হাসি অথবা কান্
  • স্থলি থেকে বিপরীত দিকে উঠে আসা (রিফ্লেক্স) অ্যাসিড)
  • অ্যাসপিরিন অথবা এন এস এ আই ডি-র মতো বেদনানাশক ওষুধ
হাঁপানি

হাঁপানি আছে তা বোঝার উপায় 

আপনার সন্তানের হাঁপানি আছে কিনা তা বোঝা যাবে যদি সে-

  • ঘন ঘন কাশে, এই কাশি খেলার সময়, রাতে অথবা হাসতে গেলে হতে পারে
  • খেলতে গিয়ে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে
  • জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়
  • বুকে চাপ ধরা বা ব্যথার অভিযোগ করে
  • শ্বাস প্রশ্বাস নেবার সময়ে সাঁই সাঁই শব্দ করে
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হয়
  • গলা ও বুকের পেশি শক্ত হয়ে যায়
  • দুর্বলতা বা ক্লান্তি প্রকাশ করে
হাঁপানি

শিশুদের হাঁপানির উপসর্গ

হাঁপানির সময় শিশুদের মধ্যে যে ধরনের লক্ষ্ণণ দেখা দিতে পারে তার অন্যতম হল বায়ু চলাচলের পথের সঙ্কোচন ও ফুলে যাওয়া এবং শ্লেষ্মার দ্বারা সবচেয়ে ছোট বায়ু চলাচলের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। সমস্যা সমাধানে আক্রান্ত শিশুটি ফুসফুসে অনেকটা বেশি করে হাওয়া রে নেয়। বাঁধার পরিমান যত বেশি হয় ফুসফুসের আয়তনও তত বেশি হয়। এর ফলে যে ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা হল-

  • সাঁই সাঁই শব্দ
  • ক্রনিক কাশি যা রাতে ও ভোরের দিকে মারাত্মক আকার েয়
  • বুকে যা বা পের অনুভুতি
  • নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • শ্বাস নেওয়ার সময় নাকের পাটা ফুলে যাওয়া, বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে
  • থেমে থেমে কথা বলা
  • অস্থির হয়ে পড়া
  • হাইপারইনফ্লেশন- বাঁকা কাঁধ কিংবা সামনের দিকে বেঁকে যাওয়া অথবা শুয়ে থাকতে পছন্দ না করা
হাঁপানি

এছাড়াও বাবা-মা আর একটি জিনিসও লক্ষ্য করে দেখতে পারেন যে তাঁদের সন্তান খেলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কিনা, অথবা কাশি বা সাঁই সাঁই শব্দ এড়াতে খেলা বন্ধ করে দিচ্ছে কিনা। এমন কি বিশ্রামে থাকাকালীন বা এক্সাসাইজ করার সময় বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যদি সংক্রমণ হয় তাহসে বাচ্চাটির জ্বর ও কাশি হতে পারে ও নাক দিয়ে জল গড়াতে পারে। অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করলে আক্রান্ত শিশুটির ঠোঁট ও আঙুল নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে।

নির্ধারণ

হাঁপানি আছে এমন অধিকাংশ শিশুর পাঁচ বছর হওয়ার আগেই উপসর্গ শুরু হয়ে যায়। যদিও শিশুটির শৈশবকালীন কোনও অসুবিধে হচ্ছে, না হাঁপানি এটা নিশ্চিত ভাবে বলা বেশ দুষ্কর। কারণ উভয় লক্ষ্ণণের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য আছ। সুতরাং ঠাণ্ডা লালে বা শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ হলেই যে হাঁপানি হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। শিশুর বায়ু চলাচলের পথ কোনও অসুস্থাতার কারণে সরু হয়ে গেলেও সাঁই সাঁই শব্দ হতে পারে। বড় হওয়ার সঙ্গে এই পথও বড় হয় তাই ঠাণ্ডা লাগলেও তখন এই সমস্যা থাকে না।

হাঁপানি

ঠাণ্ডা লাগলে বা শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ হলে যে শিশুর বার বার শ্বাসকষ্ট বা বুকে সাঁই সাঁই শব্দ হয় তার হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি আছে যদি

  • বাবা বা মা়ের ্জমা থাকে
  • একজিমার মতো ত্বকের সমস্যা ছাড়াও অ্যালার্জির লক্ষ্ণণ থাকে
  • ঠাণ্ডা না লাগা বা সংক্রমণ না থাকা সত্ত্বেও যদি শ্বাসকষ্ট হয়।

চিকিত্সক যাতে ঠিক ভাবে হাঁপানি নির্ধারণ করতে পারেন সে কারণে তাঁকে পর্যাপ্ত তথ্য জানানো দরকার। যেমন, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস, শিশুটির সামগ্রিক ব্যবহার, শ্বাস নেবার ধরন, কোনও খাদ্য থেকে অ্যালার্জি হয় কিনা ইত্যাদি। বহু ক্ষেত্রেই লাঙ ফাংশান টেস্ট করে অ্যাজমার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় ঠিকই তবে এ পরীক্ষা শিশুদের ক্ষেত্রে করা মুশকিল। এই রকম ক্ষেত্রে চিকিত্সক ৪-৬ সপ্তাহ ধরে কোনও অ্যাজমার ওষুধ দিয়ে শিশুটির মধ্যে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা দেখতে চাইতে পারেন।

কিছু তথ্য

পরিবারে হাঁপানি না থেকে অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলেও এ রোগ হতে পারে। হাঁপানি সংক্রমক নয়, তাই ছোঁয়াচেও নয়। তবে সর্দিকাশির মতো ভাইরাল সংক্রমণ ছোঁয়াচে, যা হাঁপানি াড়িয়ে দিতে পারে। যে সব বাচ্চার খুব সর্দিকাশি হয় পরবর্তীকালে তাদের হাঁপানি হতে পারে বলে একটা ধারণা চালু থাকলেও তা সত্যি নয়। যদিও এটা দেখা গেছে যে হাঁপানি আছে এমন বহু মানুষ শৈশবে লাগাতার সর্দিকাশিতে ভুগতো।

3 thoughts on “হাঁপানি কী ও কেন এই রোগ হয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *